ক্ষমতাসীন দলের এই নেতার দাবি, তার শত্রুপক্ষের লোকজন ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা ও বানোয়াট’ এই অভিযোগ ছড়াচ্ছে।
ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
এই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের পর দুই দিনেও ছায়েদুল হক এলাকায় না যাওয়ায় সমালোচিত হচ্ছিলেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার গিয়ে তিনি ঘটনাটি অতিরঞ্জিত বলার পর নতুন করে সমালোচিত হন। পাশাপাশি তার পদত্যাগের দাবি তোলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল।
এই প্রেক্ষাপটে রোববার নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন মন্ত্রী ছায়েদুল হক।
তিনি বলেন, “একটি শিশুও এ কথা বিশ্বাস করবে না যে আমার নিজ নির্বাচনী এলাকার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরিবর্তে আমি হিন্দুদের গালিগালাজ করে সাম্প্রদায়িক দঙ্গায় উসকানি দেব।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের এই উপদেষ্টার দাবি, “এ বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্য, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক, যা আমার শত্রুপক্ষ ছড়াচ্ছে।”
এই ‘শত্রুদের’ নাম বলেননি ছায়েদুল হক। তিনি বলেছেন, বিএনপির কিছু লোক আওয়ামী লীগে ‘ভিড়তে চাইছে’, যাতে বাধা দেওয়ায় তাকে ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’ হতে হচ্ছে।
“বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে আমাকে অভিযুক্ত করায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত,” বলেন ছায়েদুল।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত এবং টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামালেরও সমালোচনা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “রানা দাশগুপ্ত নিজেই সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন যে তিনিও শোনা কথা রভিত্তিতে এই গুরুতরর অভিযাগ করেছেন। অথচ উক্ত নেতৃবৃন্দ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার স্বার্থে আমার সাথে দেখা করে সহযোগিতাও করতে পারতেন। কিন্তু তারা মিথ্যা অভিযোগের তীর ছুঁড়ে দাঙ্গাকে উসকে দিয়ে সরাসরি কেন ঢাকায় চলে গেলেন, এটাও একটি জ্বলন্ত প্রশ্ন হয়ে আছে।”
ছায়েদুল হক হিন্দুদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন বলে প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে সংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে শনিবার জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ছায়েদুল হক বলেন, “আমি এ ধরনের কথা বলেছি প্রমাণ করতে পারলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেব।”
তিনি প্রশ্ন করেন, “আপনারাই বলুন, মন্ত্রী হয়ে কেন নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারব?”
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “হিন্দু ভাইদের রক্ষা করার পরিবর্তে ষড়যন্ত্রের তীরটি কেন আমার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে- তা আপনারা জানান।”
যারা ভাংচুরে অংশ নিয়েছে তাদের ‘খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির’ মুখোমুখি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলাকার মুসলমানদেরও ‘হিন্দু ভাইবোনদের’ পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান ছায়েদুল।